১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা-জানুন বিস্তারিত
গর্ভাবস্থায় বেলের শরবত খাওয়া১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে থাকছে আমার আজকের লেখা।গর্ভবতী অবস্থায় মা এবং শিশুর সুস্বাস্থ্য কামনায় খাবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।কেননা ভরপুর পুষ্টি উপাদান সম্পন্ন খাবার মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
গর্ভবতী অবস্থায় শুরু থেকেই আমাদের মনে নানা ধরনের প্রশ্ন আসে যে কোন ধরনের খাবার খেতে হবে কি কি খেলে মা ও শিশু সুস্থ থাকবে।তাই আমি আমার আজকের লেখায় গর্ভাবস্থার শুরুতেই অর্থাৎ ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
পেজ সূচিপত্রঃ ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
- গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ
- গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান
- ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত
- গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
- গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না
- আমার শেষ মতামত
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণঃ
গর্ভবতী হওয়ার শুরুতে বা বুঝে ওঠার আগে শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।যেগুলোকে গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। আর এ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের কিছু লক্ষণ গুলো হলঃ
- গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে প্রথম লক্ষণ হল মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদি সঠিক সময়ে মাশিক না আসে তাহলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে।
- প্রায় সময় ঘুম থেকে ওঠার পর বমি ভাব আসতে পারে যাকে বলে মর্নিং সিকনেস। এটি গর্ভধারণের একটি সাধারণ লক্ষণ বলে বিবেচিত।
- গর্ভধারণের শুরু থেকেই প্রস্রাবের চাপ বাড়তে থাকে।
- স্তন ফুলে যেতে পারে,স্তনে হালকা ব্যাথা হতে পারে। কোন কোন সময় স্তনের রঙের পরিবর্তন আসতে পারে।
- এছাড়া শরীরে ক্লান্তিভাব আসতে থাকে।
- খাবারে অরুচি তৈরি হয় এবং গন্ধে অসস্থি হয়।
- মাঝে মাঝে তলপেটে টান বা ব্যাথা হতে দেখা যায়।
এ সকল লক্ষণগুলো কে সাধারনত গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানঃ
গর্ভাবস্থায় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল গর্ভবতী মায়ের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা।গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করলে এটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
তাই চলুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো কি কি,,
ফলিক অ্যাসিডঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পূষ্টি উপাদান হচ্ছে ফলিক অ্যাসিড। এটি শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে সাহায্য করে।তাই গর্ভবতী মায়ের বেশি বেশি ফলিক অ্যাসিড যুক্ত খাবার পালং শাক, বাদাম, কমলা এই ধরনের খাবার খাওয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ ভরা পেটে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা
আয়রনঃ অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আইরন গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি আয়রনযুক্ত খাবার কলিজা মাংস ডিম খেতে হবে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে থাকে।
ক্যালসিয়ামঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য অন্যতম একটি পুষ্টি উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম।এটি শিশুর হাড় ও দাত গঠনে ভুমিকা রাখে।তাই এ সময় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলো ছাড়াও জিংক, আয়োডিন,ফাইবার ও ভিটামিন ডি গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকাঃ
গর্ভাবস্থায় প্রয়জনীয় পুষ্টি উপাদান সম্পন্ন ও সঠিক পরিমাণে খাবার নিশ্চিত করা গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।এ সময় সঠিক খাবার খাওয়া একজন মায়ের জন্য জরুরী।
তাই আজ আমি আপনাদের সাথে গর্ভাবস্থার শুরুতেই একজন মায়ের সারাদিনের খবার তালিকা কেমন হওয়া দরকার সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
সকালের শুরুতেঃ খূব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হাত মুখ ধুয়ে ২ টা খেজুর ও ১ গ্লাস হালকা গরম দুধ খেয়ে দিন টা শুরু করতে পারেন।প্রতিদিন দুধ না খেতে চাইলে মাঝে মাঝে চিয়া সিড ভিজানো পানি খেতে পারেন এবং সাথে কিছু ড্রাইফ্রুট খেতে পারেন।
সকালের নাস্তায় যা খাবেনঃ সুকালের নাস্তায় প্রথমে ২ টি লাল আটার রুটীড় সাথে এক বাটি সবজি ও ২ টি ডিম সিদ্ধ খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন রুটি না খেতে চাইলে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের সবজি এ ২-৩ রকম ডাল মিক্স করে সবজি খিচুড়ি রান্না করে খেতে পারেন। এছাড়া সাথে একটি যেকোনো দেশীয় ১ টি করে ফল খেতে পারেন।
সকালের মাঝখানেঃ গোসলের ঠিক ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে ১ গ্লাস ডাবের পানি ,কয়েকটা বাদাম ও পছন্দ মতো যেকোনো একটি ফল খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন ডাবের পানি না খেতে চাইলে এর পরিবর্তে মাঝে মাঝে আঁখের রস বা লেবুর শরবত খেতে পারেন।
দুপুরের খাবারঃ সারাদিন যা ই খায় না কেন দুপুরের খাবার আমাদের কাছে মুল খাবার হিসেবে বিবেচিত। দুপুরে ১ কাপ ভাত,১ কাপ ডাল ও সাথে কম তেল মসলায় রান্না ২ পিস মুরগির মাংস অথবা ১ পিস বড় সাইজের মাছের টুকরা খেতে পারেন ।খাওয়ার শেষে দুধ দিয়ে তৈরি পায়েস বা ১ কাপ টক দই খেতে পারেন। টক দই খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে।
বিকালের নাস্তাঃ বিকেলের নাস্তায় চাইলে বিভিন্ন সবজি ও অল্প কিছু মুরগির বুকের মাংস দিয়ে স্যুপ বনিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া সিদ্ধ ছোলার সাথে সামান্য বিট লবণ,শশাঁ কুচি ও সামান্য সরিষা তেল দিয়ে মাখিয়ে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন।
রাতের খাবারঃ রাতে সবসময় হালকা খাবার খাওয়া উচিত। এতে খাবার দ্রুত হজম হয়ে যায়। রাতে ২ টা লাল আটার রুটির সাথে ১ বাটি ডাল অথবা ১ পিস মাছ। তবে ভালো হয় যদি এটি সামুদ্রিক কোন মাছ হয়। সাথে ১ বাটি সবজি। রুটি না খেতে পারলে অল্প পরিমানে ভাত হেতে পারেন। সবশেষে রাতে ঘুমোতে যাওয়্যার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ খেতে পারেন।
এগুলোর পাশাপাশি প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন সকাল বিকেল হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিতঃ
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই সকল খাবারের মধ্যে ফল একটি ।কিছু কিছু ফল রয়েছে যা গরভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য খুবই উপকারি তায় চলুন জেনে নিই গরভাবস্থায় কি কি খাওয়া উচিত,,
কমলা ঃ কমলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এটি গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেম ভাল রাখতে সাহায্য করে । কমলা বা লেবু জাতীয় ফল খেলে এটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে ডিহাইড্রেশন ঠেকাতে সাহায্য করে থাকে।
পেয়ারাঃ পেয়ারা তে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফাইবার যা গর্ভবতী মায়ের হজমের জন্য অনেক ভালো কাজ করে থাকে।
বেরি জাতীয় ফলঃ বেরি জাতীয় ফল যেমন স্ট্রবেরি ব্লুবেরি রেসবেরি এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য খুব ভালো কাজ করে থাকে
ডালিমঃ ডালিম একটি আয়রনসমৃদ্ধ ফল এটি গর্ভবতী মায়ের রক্ত শূন্যতা দূর করতে খুবই কার্যকর। এছাড়া শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।
আপেলঃ আপেল একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল এটি হজমে সাহায্য করে এছাড়া এদের রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এটি গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কলাঃ কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে আয়রন যার অর্থ শুন্যতা কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে নাঃ
১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে ফল থাকা যেমন জরুরী তেমনই কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলো খাওয়া গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ।তাই গর্ভাবস্থায় এ সকল ফল খাওয়া উচিত নয়।
কাঁচা পেপেঃ কাঁচা পেঁপে তে ল্যাটেক্স নাম ের এর একটি উপাদান রয়েছে বা জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে থাকে তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে চাইলে খুব অল্প পরিমাণে পাকা পেঁপে খাওয়া যেতে পারে তবে সেটি পূর্ণ পাকা হতে হবে আধা পাকা পেঁপে খাওয়া যাবেনা।
আরও পড়ুনঃ মাথা যন্ত্রণা কমানোর ঘরোয়া উপায়
আঙ্গুরঃ গর্ভকালীন সময়ে খুব বেশি আঙ্গুর ফল খাওয়া উচিত নয়। বেশি আঙ্গুর খেলে এটি গর্ভবতী মায়ের কিছু সমস্যা তৈরি করে। গর্ভবতী মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে সেটি বেড়ে যায়।
আনারসঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য আনারসে একটি ক্ষতিকর এনজাইম থাকে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম মাস থেকে শুরু করে তিন মাস পর্যন্ত আনারস খাওয়া উচিত নয়।
তেতুলঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের মুখে রুচি থাকে না যার জন্য অনেক বেশি তেঁতুল খেয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া উচিত নয় কেননা এতে পেটে গ্যাস হতে পারে এবং শরীরে ইমিউনিটি কমে যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে নাঃ
গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।কেননা এ সময় পুষ্টিকর খাবার ব্যতীত অন্য কোন খাবার খাওয়া ঠিক নয়। ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা তে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলো জেনে নিই।
বিভিন্ন ধরনের কাঁচা বা আধাপাকা ফল খাওয়া যাবে না, অতিরিক্ত চা কফি অর্থাৎ ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বা পানীয় সফট ড্রিংকস খাওয়া যাবে না।
বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে।অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার যেমন এড়িয়ে চলতে হবে তেমনি অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। বাহিরের ভাজাপোড়া খাওয়া যাবে না। অপর্যাপ্ত রান্না করা খাবার খাওয়া যাবেনা। আগে থেকে প্রসেসড করা খাবার খাওয়া যাবে না। গর্ভাবস্থায় খাবারে এ সকল দিকের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আমার শেষ মতামতঃ
আমি আমার আজকের লেখায় ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
আশা করছি আমার এই আজকের ১ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি পড়ে আপনাদের উপকার হবে।
নিত্য নতুন এমন সব স্বাস্থ্য টিপস পেতে আমার এই সাইট টি ভিজিট করতে ভুলবেন না। প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
কন্টাক্ট আর্টিকেল এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url